biologyschool-logo
ফিচার ছবি-ব্লগ (2)

প্রতিদিন কত গ্লাস পানি পান করবেন?

পানি আমাদের জীবনের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। পানিহীন জীবন কল্পনা করা যায় না। মানুষের দেহের জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদনে প্রতিনিয়ত পানি ব্যবহৃত হয়। ফলে আমাদের দেহের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা পানি পান করি। তবে প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করতে হবে বা কত গ্লাস পানি প্রয়োজন?

৩ লিটার, ৫ লিটার বা ৮ লিটার? কোনটি সত্য। আপনাকে যতই বলা হোক আপনি প্রতিনিদ ৮ গ্লাস পানি খাবেন, সেটি যে আপনার জন্য সত্য বিষয়টি এমন নয়। কারণ আপনার দেহে প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ আপনার ভৌগলিক অবস্থান, পরিবেশ, শারিরীক গঠন, আপনার নিত্যদিনের কাজের উপর নির্ভর করে। বিশ্বের ২৩ টি দেশের ৮ থেকে ৯৬ বছর বয়সী ৫০০০ মানুষের উপর পরিচালিত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মানবে দেহের প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ ব্যক্তির শারিরীক ও পরিপাশ্বিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ‍উপর নির্ভর করে।

২৪ নভেম্বর সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে এই বিষয়ে বিস্তর ব্যাখা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত একজন মানুষ দিনে আট আউন্স পানি পান করে। তবে এর মানে এই নয় যে এই আট আউন্স তত্ত্ব সব মানুষের জন্য সত্য হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ ক্লিনিক্যাল সেন্টারের মেটাবলিক রিসার্চ প্রোগ্রামের পরিচালক কং চেন বলেন, “ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা ব্যাপক”।

জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল ইনোভেশন, হেল্থ এন্ড নিউট্রিশনের শরীরত্ত্ববিদ ইওসুকে জামাদা ও তার সহকর্মীরা মানবদেহে পানির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণার অংশ হিসেবে তারা হাইড্রোজেন পরমাণুর আইসোটোপ ডিউটেরিয়ামের মাধ্যমে মানবদেহে পানির প্রবাহ ক্রিয়া সনাক্ত করেন। তাদের গবেষণা মতে, মানুষ তার দেহের প্রয়োজনে গ্রহণকৃত পানির অর্ধেক তরল পানি পানের মাধ্যমে পায়। বাকী অর্ধেক বিভিন্ন খাবার থেকে আসে। আমরা জানি বিভিন্ন খাবারে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি থাকে। তাই একজন মানুষের দেহে প্রতিদিন কী পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হচ্ছে তা শুধুমাত্র পান করা পানি দিয়ে বিবেচনা করা যায় না।

গবেষণায় দেখা গেছে ২০-৩০ বছর বয়সী পুরুষ ও ২০-৫৫ বছর বয়সী মহিলাদের দেহে সবচেয়ে বেশী মাত্রায় পানির ব্যবহার হয়। তবে শারীরিক ক্রিয়া, অবস্থা, পরিবেশ, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ ভেদে এই মান ভিন্ন হতে পারে। পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে গড়ে প্রতিদিন দেহে পানি ব্যবহারের পরিমাণ সর্বনিম্ন ১-১.৫ লিটার থেকে সর্বোচ্চ ৬ লিটার। তবে গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, দরিদ্র দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষের দেহে পানি ব্যবহারের পরিমাণ বেশি। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু, লিঙ্গ, শরীরের ধরণ ও অন্যান্য উপাদান বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা করেছেন। দেখা গেছে, দরিদ্র্য দেশ যেমন ঘানা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়ার তুলনায় ‍উন্নত দেশে যেমন বেলজিয়াম, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের দেহে পানির ব্যবহার কম। মানব দেহের পানির ব্যবহার তার শরীরবৃত্তিয়  ক্রিয়ার ‍উপর নির্ভর করে। মানুষের দেহের কোষের বিভিন্ন শরীরৃবত্তিয় কাজ সম্পাদনের জন্য পানির শতকরা দশভাগ ব্যায় হয় ।  ফলে প্রতিনিয়ত মানুষের নিরাপদ পানির  প্রয়োজনে। যদিও সময়ের সাথে সাথে নিরাপদ পানি সংকটের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। এখন অবধি ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ নিরাপদ পানি পান করতে পারে না। হয়তো অদুর ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরোও প্রকট হবে। তবে বিশ্ব নেতৃত্বের সমন্বয় ও ফলপ্রসূ গবেষণা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমাদের আগামীর জন্য নিরাপদ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

গাছকে কী অবশ করা যায়?

অ্যানেস্থেসিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যার ফলে জীবের কোনো অংশ অবশ হয়। সাধারণত মানুষের বিভিন্ন

Read more »

Read more blogs

কোষ কাকে বলে?

কোষের গঠন ও কাজ নিয়ে কোষ বিজ্ঞান আলোচনা করে। এটা সত্য যে কোষ হল জীবের

Read more »