biologyschool-logo
ফিচার ছবি-ব্লগ (5)

প্রাণীর ভাষা বুঝতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

আমাদের চারপাশের পশুপাখি কী কথা বলতে পারে? এই প্রশ্ন আপনার কাছে অবান্তর মনে হলেও তাদের ভাব বিনিময়ের কৌশল ব্যাখ্যা করলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। কারণ ভাষা বলতে আমরা মানুষ যেভাবে কথা বলি তা বিবেচনা করি। ভাষার মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করি।পশু-পাখিদের নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করতে অবশ্যই তাদের নিজস্ব কৌশল থাকবে। পাখির কিচিরমিচির, কুকুরের ডাক, গরুর হাম্বা ধ্বনি, বিড়ালের মিউ মিউ নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কিছু প্রকাশ করে। এমনভাবে ভাবলে আপনার কাছে এই প্রকৃতিকে বড্ড কোলাহলপূর্ণ মনে হবে। হতে পারে অসহ্য উচ্চ শব্দ বা মধুর পাখির সুরের ধ্বনি।যদি আপনি কোনো বনের মধ্যে বসেন বা পাহাড়ের কোনো অংশে দাঁড়িয়ে থাকেন বা বাড়ির পাশের মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঁটেন, তাহলে আপনি চারপাশে বিভিন্ন রকম ধ্বনির আওয়াজ শুনতে পাবেন। আমাদের মতোই চারপাশের পশু-পাখি বিভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিজস্ব ভাষায় পারস্পারিক ভাব বিনিময় করে। অপত্য সন্তানকে পাশে না দেখলে গরু ডাক দেয়, কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে বানর চিৎকার করে, ইঁদুর গান করে, ঝিঁঝিঁপোকা সঙ্গীর সাথে মিলনের জন্য মিহি শব্দ করে। এছাড়াও সাম্প্রতিক গবেষণায় স্পার্ম তিমির (sperm whale) এক বিষ্ময়কর রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, স্পার্ম তিমির কন্ঠ থেকে যে ‘টিক টিক (click)’ শব্দ উৎপন্ন হয় তা অনেকটা আমাদের ভাষার স্বরবর্ণের (a-vowels ও i-vowels) মতো।বিষ্ময়কর বিষয় হলো এবারে বিজ্ঞানীরা প্রাণীকূলের ভাষা অনুধাবনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা প্রাণীদের পারস্পারিক ভাব বিনিময়ের কৌশল বিশ্লেষণ করছেন। সরল মাধ্যমের পাশাপাশি প্রাণীকূলের জটিল কন্ঠস্বর ডিকোড করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করবেন।

প্রাণীর পারস্পারিক যোগাযোগ গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণীর ভাষা অনুধাবনে বেশ কিছু সফল গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এটা সত্য যে এই বিষয়ক গবেষণায় আমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে ঋণী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিশাল পরিমাণ প্রাণীর অডিও কন্ঠস্বর বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। পূর্বে এই পরিমাণ বিশ্লেষণে কয়েক দশক প্রয়োজন হতো। বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর কন্ঠস্বর বিশ্লেষণের জন্য শতাধিক কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা টুলস (AI tools) রয়েছে। এমন একটি এআই টুলস হলো ডিপ স্কুইক (DeepSqueak)। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানী কেভিন কফি ও তার দল এই টুলসটি উদ্ভাবন করেছেন। অতিস্বনক কন্ঠস্বর (ultrasonic vocalizations) বিশ্লেষণে পারদর্শী এই টুলস ইঁদুরের কন্ঠস্বর ডিকোড করতে পারে। ইঁদুরের রেকোর্ডকৃত কন্ঠস্বর গ্রহণ করে এটি সমধর্মী অন্য স্বরের সাথে তুলনা করে। এর মাধ্যমে প্রাণীর আচরণ সম্পর্কিত অনেক তথ্য জানা যায়।ইঁদুর ভাব আদানপ্রদানে অতিস্বনক স্বর ব্যবহার করে। গবেষণায় তাদের উৎপাদিত ধ্বনি পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা বিষ্ময়কর তথ্য উদঘাটন করেছেন। বিজ্ঞানী কফি বলেন, ইঁদুর বিশেষ সময়ে ৫০ কিলোহার্টজ শব্দ উৎপাদন করে। এই সীমার ধ্বনিকে তার হাসির শব্দ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এমন অনেক সুখানুভূতি প্রকাশে ইঁদুর ভিন্ন ভিন্ন ধ্বনি উৎপন্ন করে। এছাড়াও ইঁদুর ২২ কিলোহার্টজের শব্দ উৎপন্ন করে যা ঋনাত্বক পরিবেশ প্রকাশ করে। বিশেষ করে তারা ব্যাথা পেলে বা অসুস্থ হলে এমন শব্দ উৎপন্ন করে। বিজ্ঞানী কফি তার গবেষণাগারে ইঁদুরের খারাপ অনুভূতি প্রকাশে এই সীমার কম্পাঙ্ক তৈরী করেন। তবে মানুষ এই শব্দ শুনতে পায় না । কারণ মানুষ যে সীমার শব্দ শুনতে পায় এটি তার বাইরে। তবে DeepSqueak এবং অন্যান্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা টুলস এই শব্দ ডিকোড করতে পারে।

প্রাণীর কী ভাষা আছে?

যোগাযোগ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তথ্যের আদান হয়। সকল প্রাণী বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে তথ্যের আদান প্রদান করে। কেউ ঘ্রাণ দিয়ে, কেউ ফেরোমোনের মাধ্যমে, কেউ বাহ্যিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে, কেউ কন্ঠস্বরের মাধ্যমে। যদিও প্রাণীর ভাষা নিয়ে অনেকে আপত্তি করেন। এর প্রধান কারণ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের ঠিক যেভাবে ভাষার মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করি, প্রাণীদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না। একারণে আমরা ভাবি যে তাদের ভাষা নেই। যদি আমরা তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে বিবেচনা করি, তাহলে অবশ্যই ভাষা গঠন করে এবং তার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। হ্যা, প্রাণীদের ভাষা আমাদের মতো উন্নত নয়। একারণে স্পার্ম তিমির তথ্য আদান প্রদান, বানরের ভাষা বিনিময় আমাদের থেকে ভিন্ন। বিজ্ঞানী কফির মতে, ভাষা (Language) হলে যোগাযোগের একটি উন্নত টুলকীট যার মধ্যে একটি স্বতন্ত্র হিসেবে মানুষ ব্যবহার করে। মানুষ ভাষার মাধ্যমে তার মনের গভীরের চিন্তা ও ভাবনা প্রকাশ করতে পারে। আমরা মনে করি অন্য প্রাণী তাদের কন্ঠস্বর বা যোগাযোগের মাধ্যমে দিয়ে এই কাজ করতে পারে না। মানুষের বিষয়ে অন্য একটি তত্ত্ব হলো চেতনা (consciousness) বা উপলব্ধি ক্ষমতা। বলা হচ্ছে উন্নত ভাষার পাশাপাশি মানুষের রয়েছে উচ্চ শ্রেণীর চেতনা। তবে মানুষের ও অন্যান্য প্রাণীর ভাষা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিজ্ঞানী কফি বলেন, “ভাষাকে কিভাবে সজ্ঞায়িত করা যাবে এবং প্রাণীদের যোগাযোগ মাধ্যমের কোন উপাদানের সাথে মানুষের মিল আছে তা নিয়ে আমরা বিতর্ক করি। যে সকল ইঁদুর নিয়ে আমরা গবেষণা করেছি সেগুলো বেশ সামাজিক ও তাদের পারস্পারিক যোগাযোগের প্রবণতা আছে। এরা যে কন্ঠস্বর উৎপন্ন করে তা বেশ বৈচিত্রময় এবং বিভিন্ন প্রকার তথ্য পরিবহন করে। তবে এখন অবধি আমি এটিকে ভাষা বলে বিবেচনা করতে পারি না।”

 

অনুবাদ: রফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞান লেখক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বায়োলজি স্কুল

সূত্র: ডয়চে ভ্যালে 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Read more blogs

কোষ কাকে বলে?

কোষের গঠন ও কাজ নিয়ে কোষ বিজ্ঞান আলোচনা করে। এটা সত্য যে কোষ হল জীবের

Read more »