biologyschool-logo
কোষ গবেষণায় ব্যবহৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্র

কোষ গবেষণায় ব্যবহৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্র

কোষ অতি আণুবীক্ষনিক। খালি চোখে কোষ দেখা যায় না। তাই কোষ গবেষণায় ব্যবহৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্র পর্যবেক্ষণের জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কোষ নিয়ে জানার পূর্বে আমাদের অণুবীক্ষণ যন্ত্র সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এই লেকচারে অণুবিক্ষণ যন্ত্র নিয়ে আলোচনা করা হবে। লেকচারে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে:-

১) অণুবীক্ষণ যন্ত্র পরিচিতি

২) অণুবীক্ষণ যন্ত্রের বিভিন্ন প্যারামিটার

৩) বিভিন্ন প্রকার অণুবীক্ষণ যন্ত্র

অণুবীক্ষণ যন্ত্র

অণুবীক্ষণ যন্ত্র এক প্রকার বৈজ্ঞানিক ডিভাইস। এটি অতি ক্ষুদ্র বস্তু বা খালি চোখে দেখা যায় না এমন বস্তু পর্যবেক্ষণের জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এটি অতি ক্ষুদ্রাকার বস্তুকে বিবর্ধিত করে আমাদের দেখার উপযোগী করে তোলে।

অনুবীক্ষণ যন্ত্রের ইংরেজি  Microscopy. এই শব্দটি গ্রিক শব্দ mikros ও skopein থেকে এসেছে। mikros এর অর্থ ‘ক্ষুদ্র’ এবং skopein এর অর্থ ‘যাচাই করা’।

প্রতিটি জীবের দেহে কোটি কোটি কোষের সমাহার। অথচ আলাদাভাবে কোনো একটি কোষকে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। আমাদের কোনো ইন্দ্রিয়ই এতোটা উন্নত নয় যে, তাদের মাধ্যমে আমরা কোষকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারবো। সময়ের সাথে বিভিন্ন যন্ত্রের উদ্ভাবনের ফলে আমার কোষ নিয়ে অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। ১৫৯০ সালে চশমা প্রস্তুতকারী হ্যান্স ও জাকারিয়া জনসনের জটিল অণুবীক্ষণযন্ত্রের উদ্ভাবনের ফলে কোষ নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হয়। পরবর্তীতে তাদের উদ্ভাবিত অনুবীক্ষণযন্ত্র সময়ের সাথে আরোও উন্নত হয়। সর্বপ্রথম তাঁদের উদ্ভাবিত অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে কুষ্ঠ রোগের জীবাণু সনাক্ত করা হয়েছিল। এটার বিবর্ধন ক্ষমতা ছিল ৩-১০ x । এই অণুবীক্ষণযন্ত্রের অনেক অসুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও এটার মূলনীতি ব্যবহার করে আজকের আধুনিক অণুবীক্ষণযন্ত্র উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়।

১৬৬৫ সালে সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী রবার্ট হুক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে কোষ দেখতে পান। অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে তিনি ওক গাছের বাকলের মৃত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন এবং মোটামুটি ¯পষ্টভাবে কোষপ্রাচীর দেখতে পান। রবার্ট হুক যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করেন তার বিবর্ধণ ক্ষমতা ছিল ৩০ x । চিত্রে রবার্ট হুকের কোষ পর্যবেক্ষণ ও ব্যবহৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্র দেখানো হলো।

রবার্ট হুকের অণুবীক্ষণ যন্ত্র
রবার্ট হুকের অণুবীক্ষণ যন্ত্র

তবে সজিব কোষকে দেখার জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল অ্যান্থনি ভন লিউয়েনহুক এর নিপুণ হাতে গড়া উন্নত অণুবীক্ষণযন্ত্রের জন্য। ১৬৭৪ সালে রবার্ট হুক বিজ্ঞানী অ্যান্থনি ভন লিউয়েন হুকের সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতের এক পর্যায়ে অ্যান্থনি ভন লিউয়েন হুক রবার্ট হুককে তাঁর তৈরি অণুবীক্ষণযন্ত্রের মাধ্যমে পানিতে ভেসে বেড়ানো অতি ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণিকুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এগুলো  রবার্ট হুক দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। এগুলো ছিলো বিভিন্ন এককোষী অণুজীব। এভাবে বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোষ দেখতে পান। মূলত এই যন্ত্র কোনো একটি ক্ষুদ্র নমুনাকে বিবর্ধিত করে আমাদের দেখায়। তাহলে কোনো নমুনাকে বিবর্ধন করতে সক্ষম যে যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় আকারে পর্যবেক্ষণ করা যায় তাকে মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণযন্ত্র বলে।

অণুবীক্ষণযন্ত্রের বিভিন্ন প্যারামিটার

কোনো একটি অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাথে তিনটি প্যারামিটার ওতপ্রোতভাবে জড়িত: বিবর্ধন, রেজোল্যুশন ও কন্ট্রাস্ট।

১) বিবর্ধন (magnification): কোনো বস্তুর বিম্বের দৈর্ঘ্য ও এর প্রকৃত দৈর্ঘ্যের অণুপাত হলো তার বিবর্ধন। এর মাধ্যমে কোনো একটি বস্তুকে তার স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় কতগুণ বড় দেখা যায়, তা প্রকাশ করা হয়। আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র কোনো বস্তুকে তার স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় সাধারণত ১০০০ গুণ বড় আকারে দেখাতে পারে। তবে এর চেয়েও বেশিগুণে বিবর্ধন সম্ভব, তবে সেক্ষেত্রে প্রতিবিম্বে বস্তুর বিভিন্ন অংশ স্পষ্টভাবে দেখা যাবে না।

২) রেজোল্যুশন (resolution): কোনো একটি বস্তু বা ছবির স্পষ্টতা নির্দেশ করে। দুটি ভিন্ন বিন্দুর মধ্যে নূন্যতম দূরত্ব কত হলে তাদেরকে আলাদা আলাদা বিন্দু হিসেবে দেখে বোঝা যাবে, সেটিই ঐ বস্তুর রেজোল্যুশন। যেমন: খালি চোখে আকাশের দিকে তাকালে যেটাকে একটি তারা বলে মনে হবে, টেলিস্কোপের সাহায্যে তার দিকে তাকালে পাশাপাশি দুটি তারা দেখা যেতে পারে, যা কিনা খালি চোখে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না। এক্ষেত্রে টেলিস্কোপটির রেজোল্যুশন চোখের চেয়ে বেশি। সাধারণ আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্রের রেজোল্যুশন ০.২ μm পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর অর্থ হলো ০.২ μm দূরত্বে দুটি ভিন্ন বিন্দু বা বস্তু থাকলে তাদেরকে আলাদা আলাদাভাবে দুটি ভিন্ন বিন্দু হিসাবে দেখে বোঝা যাবে।

৩) কন্ট্রাস্ট (contrast): কন্ট্রাস্ট কোনো একটি দৃশ্যের বিভিন্ন অংশের উজ্জলতার মধ্যকার পার্থক্য নির্দেশ করে। এটার মাধ্যমে কোনো একটি নমুনার বিভিন্ন অঙ্গাণু আলাদা আলাদাভাবে স্পষ্ট হয়। কোনো একটা নমুনার স্পষ্টতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করে পর্যবেক্ষিত নমুনার কন্ট্রাস্ট বৃদ্ধি করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো নমুনা অণুবীক্ষণযন্ত্রে পর্যবেক্ষণের আগে বিশেষ ধরণের রঞ্জক পদার্থে নিমজ্জিত করে সেটা এর নিচে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

 

জীববিজ্ঞান গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন অণুবীক্ষণযন্ত্র

গবেষণার অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন প্রকার অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে জীববিজ্ঞান গবেষণায় আমরা সাধারণত দুই প্রকার অণুবীক্ষণ যন্ত্র দেখতে পায়। এর একটি হলো আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Light microscope) ও ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Electron microscope)।

আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Light microscope)

বর্তমানে আমরা গবেষণাগারে সাধারণত যে অণুবীক্ষণযন্ত্র দেখতে পাই, সেটা বিজ্ঞানী মহলে জটিল আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্র (Compound Light Microscope) নামে পরিচিত। একে সংক্ষেপে আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্র (LM) বলা হয়।

  • আলোক অনুবীক্ষন যন্ত্র দৃশ্যমান আলো ব্যবহার করে কোনো একটি নমুনাকে বড় করে দেখায়।
  • সাধারণত আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলতে নন-ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপকে বুঝানো হয়। তবে ফ্লুরোসেন্স মাইক্রোস্কোপ আলোর চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করে। 
  • দৃশ্যমান আলো ব্যবহার চালিত আধুনিক আলোক অনুবীক্ষণে যন্ত্র দুইটি ম্যাগনিফাইং লেন্স থাকে। পাশাপাশি বেশ কিছু কারেক্টিং (corecting) লেন্স থাকে।
  • প্রথম লেন্সটি নমুনা বস্তুর উপর ফোকাস করে বিবর্ধিত করে এবং দ্বিতীয় লেন্স এটিকে আরোও বেশি বিবর্ধিত করে আমাদের চোখে ধরা দেয়।
  • মাইক্রোস্কোপের বিবর্ধন লেন্সের সংখ্যা ও ধরণের উপর নির্ভর করে। লেন্সের সংখ্যার উপর নির্ভর করে দুই প্রকার মাইক্রোস্কোপ আছে। একটি সরল আলোক মাইক্রোস্কোপ ও অন্যটি জটিল আলোক মাইক্রোস্কোপ। সরল মাইক্রোস্কোপে একটি লেন্স থাকে বলে বিবর্ধন কম। অন্যদিকে যৌগিক মাইক্রোস্কোপে দুইসেট লেন্স (আইপিস ও অবজেকটিভ লেন্স)

 আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র কীভাবে বস্তু দেখা হয়? 

১) প্রথমে নোজপিস ঘুরিয়ে ৪ x কিংবা ১০ x অবজেকটিভটি স্টেজের কেন্দ্র বরাবর লম্বভাবে স্থাপন করতে হবে। এবার কোর্স অ্যাডজাস্টমেন্ট নব ঘুরিয়ে স্টেজটিকে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠাতে হবে যার পরে নবটি আর ঘোরানো যায় না।

২) এরপর স্টেজে স্লাইডটি স্থাপন করতে হবে। ডানে-বামে এবং সামনে-পেছনে স্লাইডটি সরিয়ে এমন অবস্থানে আনতে হবে যাতে স্টেজের মধ্যভাগের বৃত্তাকার ছিদ্র বরাবর স্লাইডের সেই অংশ থাকে যেখানে দ্রষ্টব্য বস্তুটি অবস্থিত। কনডেন্সার এবং অ্যাপার্চার প্রয়োজন মাফিক সমন্বয় করতে হবে। যত বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন অবজেকটিভ লন্সে দিয়ে দেখা হবে, কনডেন্সার এবং আইরিস-ডায়াফ্রামের অ্যাপার্চার দিয়ে তত বেশি আলো ঢুকতে দিতে হবে।

৩) এবার আইপিসে চোখ রেখে সাবধানে কোর্স অ্যাডজাস্টমেন্ট নব ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে স্টেজ নামাতে হবে। যখনই বস্তু দৃশ্যমান হবে তখনই ফাইন অ্যাডজাস্টমেন্ট নব ঘুরিয়ে সেটিকে সঠিকভাবে ফোকাস করতে হবে। ফোকাস করা হয়ে গেলে স্টেজের নব ঘুরিয়ে স্লাইডটি ডানে-বামে এবং সামনে-পেছনে করে সেটির বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

৪) সাধারণত প্রথমে কম বিবর্ধনে ফোকাস ও পর্যবেক্ষণ করে ক্রমান্বয়ে উচ্চতর বিবর্ধনে ফোকাস ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। একবার ৪ x অবজেকটিভে বস্তুটি ফোকাস করা হয়ে গেলে স্লাইড স্থির রেখে নোজপিস ঘুরিয়ে ৪ x অবজেকটিভের জায়গায় ১০ x অবজেকটিভ এনে ফাইন অ্যাডজাস্টমেন্ট নব সামান্য ঘোরালেই সাধারণত ১০ x অবজেকটিভে ফোকাস সম্পন্ন হয়। তখন আর নতুন করে গোড়া থেকে ফোকাস করার দরকার হয় না। একই কথা প্রযোজ্য হবে ১০ x অবজেকটিভে ফোকাস করা স্লাইডকে ৪০ x বা ৪৫ x অবজেকটিভে ফোকাস করার ক্ষেত্রে।

এবার আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্র কিভাবে নমুনা বস্তুকে বিবর্ধণ করে, তা দেখি।

১) প্রথমে আলোক উৎস থেকে নির্গত আলোক রশ্মি নমুনা বস্তুর উপর আপতিত হয়।

২) এরপর আলোক রশ্মি নমুনা বস্তু মধ্য দিয়ে প্রবাহীত হয়ে অণুবীক্ষণযন্ত্রে সংযুক্ত অবজেকটিভ লেন্সে আপতিত হয়।

৩) লেন্সে আপতিত আলোক রশ্মিকে এমনভাবে প্রতিসরিত করে যেন নমুনা বস্তুটির ছবি বহুগুণে বর্ধিত হয়। অর্থাৎ যে বস্তুকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না, তার ছবি লেন্সের মাধ্যমে বিশাল আকারে রূপান্তরিত হয়। এরপর বিবর্ধিত ছবি খালি চোখে বা ক্যামেরার মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়।

ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ (Electron microscope

আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্রে কোনো বস্তু দেখার জন্য প্রতিফলিত আলোর সাহায্য নেওয়া হত, কিন্তু এই অণুবীক্ষণযন্ত্রে ব্যবহার করা হলো একঝাঁক ইলেকট্রন।

আমরা জানি, রেজ্যুলেশনের সাথে তেজস্ক্রিয়তার একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তেজস্ক্রিয় পদার্থের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হলে রেজ্যুলেশন কম হয়, অপরদিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হলে রেজ্যুলেশন বেশি হয়। এটি স্পষ্ট যে, দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষা ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম। ফলে আলোক অণুবীক্ষণযন্ত্রে কোনো বস্তুর যে রেজ্যুলেশন পাওয়া যায়, ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি রেজ্যুলেশন পাওয়া যাবে। ফলে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কোনো বস্তুর পুরো অংশ দৃশ্যমান না হলেও, ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রে তার অধিকাংশ দৃশ্যমান হবে।

ইলেকট্রনিক অণুবীক্ষণযন্ত্রের প্রধান শক্তি নিক্ষিপ্ত ইলেকট্রন। কোনো বস্তুর আপতিত ইলেকট্রন তিনটি ধর্ম প্রদর্শন করে। যেসমন:

১. বস্তুর উপর নিক্ষিপ্ত ইলেকট্রনের কিছু অংশ এদিক সেদিক বেঁকে যায় বা বিচ্যুত হয়ে যায়। এদেরকে বিচ্যুত ইলেকট্রন বলা হয়।

২. কিছু ইলেকট্রন বস্তুর পৃষ্ঠে আপতিত হওয়ার পর বস্তু উত্তপ্ত হয়। ফলে বস্তুর অভ্যন্তরের ইলেকট্রন উত্তেজিত হয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। এদেরকে বলা হয় সেকেন্ডারি ইলেকট্রন (Secondary electron)|

৩. কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন বস্তু কর্তৃক শোষিত হয়।

প্রতিনিয়ত আমরা যেসব ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করি, তা প্রধানত দুই প্রকার।

১) স্ক্যানিং ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র (scanning electron microscope), যাকে সংক্ষেপে SEM বলা হয় এবং

২) ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র (transmission electron microscope), যাকে সংক্ষেপে TEM বলা হয়।

১) স্ক্যানিং ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র (SEM)

  • কোনো বস্তুর পৃষ্ঠতল সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য স্ক্যানিং অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
  • স্ক্যানিং ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রের ইলেকট্রন গান (ইলেকট্রনের উৎস) থেকে বস্তুর উপর ইলেকট্রন আপতিত হয়।
  • ফলে আপতিত ইলেকট্রনের কিছু অংশ বিচ্যুত হয়, কিছু অংশ সেকেন্ডারি ইলেকট্রন উৎপন্ন করে এবং কিছু ইলেকট্রন বস্তু কর্তৃক শোষিত হয়।
  • অণুবীক্ষণযন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন ডিটেক্টর বস্তুতে আপতন পরবর্তী সৃষ্ট তিন প্রকার ইলেক্ট্রন সনাক্ত করে। পাশাপাশি ইলেকট্রন নিগর্মনের সময় প্রকৃতি অনুযায়ী ইলেকট্রন প্যাটার্নকে ইলেকট্রনিক সংকেতে রূপান্তর করে।
  • অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আইপিসে চোখ রাখলে ইলেকট্রন সংকেতের প্রেক্ষিতে ঐ বস্তুর বর্ধিত ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
  • এই অণুবীক্ষণযন্ত্রে ইলেকট্রনের কণা ধর্ম প্রয়োগ করে বস্তুর পৃষ্ঠদেশের ধরণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও বস্তুর বর্ণ সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। এটি অনেকটা চোখ বেঁধে কোনো বস্তুকে স্পর্শ করার মত। তোমার চোখ বেঁধে যদি হাতে পাথর বা ইটের টুকরা দেওয়া হয়, তুমি কি এর রঙ বলতে পারবে? হাত দিয়ে স্পর্শ করে তুমি শুধু বলবে: এটির পৃষ্ঠ খসখসে বা মসৃণ, এটি গোলাকার বা সমতল, আকারে ছোট না বড়। একইভাবে, এই অণুবীক্ষণযন্ত্র শুধুমাত্র বস্তুর পৃষ্ঠদেশের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দেয়।

২) ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র (TEM)

  • কোনো বস্তুর ভেতরের গঠন স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র (TEM) ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রের কার্যপদ্ধতি অনেকটা স্ক্যানিং ইলেকট্রনিক অণুবীক্ষণযন্ত্রের মত।
  • তবে মূল পার্থক্য হলো SEM-এ ইলেকট্রন বস্তুকে ভেদ করে যেতে পারে না বরং বস্তুতে আপতিত হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়। অপরদিকে ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রে ইলেকট্রন বস্তুকে ভেদ করে চলে যায়।
  • যে বস্তুকে আমরা পর্যবেক্ষণ করতে চাই, তার নমুনা প্রস্তুত করা এই অণুবীক্ষণযন্ত্রের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রে বস্তুর খুব পাতলা নমুনা ব্যবহার করা হয়।
  • যেহেতু ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব কম, ফলে সে পাতলা (আল্ট্রাথিমিক) নমুনা ভেদ করে যেতে পারে। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রে রাখা নমুনা ভেদ করে যাওয়ার পর একটি প্রজেকশনে আপতিত হয়। ফলে প্রজেকশনে আপতিত ইলেক্ট্রন বস্তুর অভ্যন্তরের একটি প্রতিচ্ছবি গঠন করে। ফলে আমরা নমুনাটির অভ্যন্তরের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।
  • অনেক সময় প্রদত্ত নমুনাকে ভারী ধাতু দিয়ে স্টেইন করা হয়। স্টেইন হলো অণুবীক্ষণযন্ত্রে কোনো নমুনার প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে দেখার জন্য বিশেষ পদার্থ (সেটা রঙিন হতে পারে) ব্যবহার করা। স্টেইন করার জন্য বিভিন্ন প্রকৃতির পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ভারী ধাতু দিয়ে স্টেইনিং করলে ইলেকট্রন নমুনা বস্তুর কিছু কিছু অংশে বেশি পরিমাণে আপতিত হয়। ফলে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে নমুনা বস্তুটি অধিক স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সাধারণত ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্রের রেজ্যুলেশন ক্ষমতা ০.২ ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

শ্রীলংকা জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২৪ (প্রশ্ন ও উত্তর)

বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তুতি সহায়ক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড প্রশ্ন বাংলায়

Read more »

Read more blogs

কোষ কাকে বলে?

কোষের গঠন ও কাজ নিয়ে কোষ বিজ্ঞান আলোচনা করে। এটা সত্য যে কোষ হল জীবের

Read more »