ফল ও শাকসবজি মানুষের অতি প্রিয় খাবার। ফলের জন্য মৌসুমের অপেক্ষা করলেও আমরা প্রতিনিয়ত শাকসবজি খেয়ে থাকে। প্রতিবার খাবার টেবিলে ভাতের সাথে বিভিন্ন তরকারির দেখা মেলে। আর এসকল তরকারি হলো বিভিন্ন শাকসবজির সমাহার। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে বছরব্যাপী ফলের দেখা মেলে। তাই খাবারের টেবিলে অন্যান্য খাবারের সাথে দেশি বিদেশী হরেকরকম ফলের দেখা মিলছে ইদানিং। নিজেকে সুস্থ রাখার আশায় অনেকে প্রতিবার খাবারের পর নিয়মিত ফল খান। জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারায় মানুষ এখন পরিমিত হারে সবজি ও ফল খাচ্ছে
তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরাপদ কী না এই প্রশ্নে। চাষাবাদ থেকে শুরু করে সরবরাহ অবধি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারে ফল ও শাকসবজি গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকে আতংক অনুভব করেন। তবে সকল সবজি ও ফল অনিরাপদ এমনটি ঠিক নয়। নিজের গৃহের পতিত জমিতে নিরাপদ পদ্ধতিতে আবাদ বা নিরাপদ পদ্ধতিতে আবাদ হয়েছে এমন খামার থেকে সংগ্রহ করতে পারলে অনেকটা নিরাপদ থাকা যায়। পাশাপাশি ফল ও সবজি ক্রয়ের পর কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে কিছুটা হলেও জীবাণু দুর করা যায়। এসকল পদ্ধতিতে অনুসরণ করে সবজি ও ফল গ্রহণ করলে আমরা জীবাণুমুক্ত নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অগ্রসর হতে পারবো। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফল ও শাকসবজি জীবাণুমুক্ত করার এমন কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে আজকের আলোচনা।
১) পরিষ্কার পানিতে ধৌতকরণ:

ফল ও শাকসবজি ক্রয় করে বাসায় আসার পর পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। অনেকসময় শাকসবজি ও ফল যেমন আলু, বেগুন, ঢ়েঁড়স, কলা, পটল, আম, কলা, কমলা, আপেল, আনার প্রভৃতির গায়ে মাটি ও অন্যান্য জীবাণু লেগে থাকে। ঠান্ডা পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধৌত করলে এই সকল মাটি ও জীবাণু সবজি ও ফলের গা থেকে মুক্ত হয়। ভালোভাবে ধৌত করলে ফল-সবজির গায়ে লেগে থাকা শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দুর করা যায়।
২) লবণ-পানিতে ধৌতকরণ:

লবণ পানির দ্রবণে ফলমূল ও শাকসবজি ধৌত করলে কিছু জীবাণু নিধন করা যায়। লবণের জীবাণুনাশক ক্ষমতা থাকায় তা সবজি-ফলের গায়ে লেগে থাকা জীবাণু দমন করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ২% লবণ-পানির দ্রবণে ধৌত করলে ফল ও সবজির গায়ে লেগে প্রায় সকল জীবাণু নিধন হয়।
৩) খোসা ছাড়ানো ও ছেলা:

কিছু কিছু সবজি ও ফল ছিলে বা খোসা ছাড়িয়ে গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে বেগুন, আলো, পটল, কমলা, আপেল, কলা, তরমুজ, আনারস প্রভৃতি। কন্টাক্ট ও সিস্টেমিক বালাইনাশকের অধিকাংশ এই পদ্ধতিতে দুর হয়ে যায়। এককথায় ফল ও সবজির বাইরের পৃষ্টসহ বাকলের অংশের জীবাণু এই পদ্ধতিতে দুর হয়ে যায়। তাই সম্ভব হলে আমাদেরকে সবজি ও ফলের বাকল ছিলে ভক্ষণ করা চর্চা করতে হবে।
৪) ব্লাঞ্চিং:

ব্লাঞ্চিং হলো শাকসবজি ও ফলমূল থেকে জীবাণু দুর করার একটি কার্যকর পদ্ধতি। এটি একটি ফ্রেঞ্চ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ফলমূল ও শাকসবজিকে চরম তাপমাত্রায় রাখা হয়। বিশেষ করে গরম পানিতে বা ফলমূল ও শাকসবজিতে গরম হাওয়া প্রবাহিত করা হয়। ব্লাঞ্চিংয়ের জন্য শাকসবজি ও ফলমূল ১৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট গরম পানিতে চুবিয়ে তারপর ঠান্ডা পানির পাত্রে রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে অধিকাংশ জীবাণু দূর হয়ে যায়।
৫) লেবুর রস বা সাইট্রিক এসিড:

লেবুর রস বা সাইট্রিক এসিডের সাথে পানি মিশ্রিত করে শক্তিশালী জীবাণুনাশক তৈরী করা হয়। এক লিটার পানিতে ২-৩ টেবিল চামচ সাইট্রিক এসিড মিশিয়ে তাতে ফলমূল ও শাকসবজি চুবিয়ে কয়েক মিনিট রেখে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৬) মোমের আবরণ পরিষ্কার:

কিছু কিছু ফলে মোমের আবরণ দেওয়া থাকে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফলে এই আবরণ দেওয়া থাকে। আমাদের দেশে আপেলের গায়ে এমন মোমের আবরণ দেখা যায়। মোমের আবরণ ভক্ষণযোগ্য ও ক্ষতিকর না হলেও এর গায়ে ময়লা বা জীবাণু লেগে থাকতে পারে। তাই মোমের আবরণ থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সম্ভব হলে ধারালো ছুরি দিয়ে মোমোর আবরণ দুর করে ফেলতে হবে।
৭) বাসায় জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার

জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করে ফল ও শাকসবজি থেকে জীবাণু দুর করা যায়। এই জীবাণুনাশক চাইলে আপনি বাড়িতে তৈরি করতে পারেন। বাসায় তৈরী জীবাণুনাশক তৈরির জন্য লেবুর রস, বেকিং পাউডার ও পানি প্রয়োজন হবে। এই তিনটি উপাদান একত্রে মিশ্রিত করে একটি স্প্রে বোতলে রেখে দিতে হবে। ফল ও শাকসবজি নিয়ে আসলে তাতে পরিমাণমত স্প্রে করে ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। এর ফলে অধিকাংশ জীবাণু ও বালাইনাশক দুর হয়ে যাবে।
৮) হলুদ পানি

হলুদ মিশ্রিত পানি শক্তিশালী জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ১ লিটার পানিতে ১ চা চামচ হলুদের গুড়া মিশিয়ে তাতে ফলমূল ও মাকসবজি ধৌত করলে জীবাণু দুর হয়ে যাবে। হলুদ জৈব পদার্থ তাই পরিমাণে সামান্য বেশি হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে না।